নারী ও অমুসলিম ভোটারা এবার নির্বাচনে ফ্যাক্টর
- আপলোড সময় : ৩০-১১-২০২৫ ০৫:৩৩:৪৪ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ৩০-১১-২০২৫ ০৫:৩৩:৪৪ অপরাহ্ন
সারা দেশেই বইছে নির্বাচনী আমেজ। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো জোর দিচ্ছে নারী ও অমুসলিম ভোটারদের বিষয়ে। কারণ তারা মনে করছে, শেষ পর্যন্ত ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবেন নারী ও হিন্দু ভোটাররা। জয়-পরাজয় নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবেন অমুসলিম ভোটাররা। এর বাইরে নির্বাচনে অন্যতম ভূমিকা রাখবেন তরুণ ভোটাররা। ফলে বিভিন্ন ধরনের ভোটারকে আকৃষ্ট করতে প্রার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনা করছেন। জাতীয়তাবাদী মহিলা দল ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মহিলা বিভাগের সদস্যরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নারী ভোটারদের সঙ্গে কথা বলছেন।
ইসি সূত্র জানায়, গত ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট ভোটার ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ছয় কোটি ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ৯০৭ জন এবং নারী ভোটার ছয় কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার ৪২ জন। মোট ভোটারের মধ্যে তরুণ ভোটার ৩০ শতাংশের কাছাকাছি। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিএনপি পাঁচ অগ্রাধিকারমূলক পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, যদি বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হয়, তাহলে আমাদের মেয়ে, মা, বোন এবং সহকর্মীরা ভয় নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবেন না। নারীদের অবশ্যই নিরাপদ বোধ করতে হবে।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট সূত্র জানায়, দেশে অমুসলিম ভোটারের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। এর বেশির ভাগই হিন্দু ভোটার। ৯০টি আসনে হিন্দু ভোটার ৭০ হাজার থেকে এক লাখ ৭০ হাজারের কাছাকাছি। ১০০টি আসনে ৫০ হাজার থেকে ৬৯ হাজার এবং ১১০টি আসনে ২৫ হাজার থেকে প্রায় ৪৯ হাজার হিন্দু ভোটার আছেন। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী এস এন তরুণ দে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশের ৮৬টি আসনের জয়-পরাজয় ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে। প্রতিটি আসনে হিন্দু ভোটারদের বড় ভূমিকা রয়েছে। আমাদের দল থেকেও হিন্দু ভোটারদের যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়। আমার নির্বাচনী আসন আশুগঞ্জ ও সরাইলে ৭০ হাজার হিন্দু ভোটার আছেন। দল থেকে যদি আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়, তাহলে এই আসনে বিএনপির বিজয় সুনিশ্চিত।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশে হিন্দু ভোট সাধারণত আওয়ামী লীগের একটি ভোটব্যাংক বলে পরিচিত। কিন্তু আগামী নির্বাচনে যেহেতু আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের সুযোগ নেই, তাই এই ভোটব্যাংকই আগামী নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের নির্ধারক হয়ে দাঁড়াবে। মূলত হিন্দু জনগোষ্ঠী যে দল বা সংসদীয় আসনের যে প্রার্থীর কাছে নিজেদের বেশি নিরাপদ মনে করবে, তাঁদেরই এবার ভোট দেবে। হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোটের ক্ষেত্রে জামায়াতের চেয়ে বিএনপি অনেকটাই এগিয়ে আছে।
হিন্দু ভোটারদের নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বিশেষ ভাবনার প্রমাণ পাওয়া যায় গত দুর্গাপূজার সময়ে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, থানা, জেলা ও মহানগর পর্যায়ে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করা হয়। তারা পূজা নির্বিঘ্নে করতে স্থানীয় পূজা উদযাপন পরিষদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে। পাশাপাশি কোনো রকম সমস্যা যাতে না হয় সে জন্য বিএনপির মনিটরিং টিম গঠন করা হয়। দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে উদযাপনে মাঠে ছিলেন জামায়াত ইসলামীর নেতাকর্মীরাও।
বিএনপি নেতারা বলছেন, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী বিএনপি সব ধর্মের মানুষের নিরাপত্তা দিতে বদ্ধপরিকর। ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার। যারা নির্বাচন চায় না, তারা দুর্গাপূজা নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু বিএনপির প্রত্যেক নেতাকর্মী সজাগ থেকেছেন। আগামী দিনেও বিএনপি হিন্দুদের পাশাপাশি সব ধর্মের মানুষের নিরাপত্তায় অগ্রগামী থাকবে।
গত ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে বিএনপি। তালিকায় নারী প্রার্থী ১০ জন। দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া লড়বেন তিনটি আসনে। তাঁর আসনগুলো হলো—দিনাজপুর-৩, বগুড়া-৭ ও ফেনী-১। বিএনপির অন্য নারী প্রার্থীরা হলেন—নাটোর-১ আসনে ফারজানা শারমিন, যশোর-২ আসনে মোছা. সাবিরা সুলতানা, ঝালকাঠি-২ আসনে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টু, শেরপুর-১ আসনে সানসিলা জেবরিন, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রিতা, ঢাকা-১৪ আসনে সানজিদা ইসলাম তুলি, ফরিদপুর-২ আসনে শামা ওয়াবেদ ইসলাম, সিলেট-২ আসনে মোছা. তাহসিনা রুশদীর এবং ফরিদপুর-৩ আসনে নায়াব ইউসুফ আহমেদ। বিএনপি ঘোষিত ২৩৭ আসনের মধ্যে চারজন অমুসলিম প্রার্থী আছেন। তবে ঘোষণা না হওয়া অন্য আসনগুলোতে একাধিক হিন্দু প্রার্থী থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে চমক দেখাতে চায় জামায়াতে ইসলামী। এ জন্য সর্বস্তরে কাজ করে যাচ্ছেন দলটির নেতাকর্মীরা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ ভিন্নধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে যাচ্ছেন তাঁরা। দিচ্ছেন নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের আশ্বাস। বাড়ি বাড়ি গিয়ে নারী ভোটারদের কাছেও ভোট চাচ্ছেন তাঁরা। করছেন উঠান বৈঠক। বলছেন, আগামী নির্বাচনে জয়ী হলে নারীদের ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেবে না দলটি।
জানা গেছে, ভিন্নধর্মের মানুষের কাছে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে হিন্দু অধ্যুষিত খুলনা-১ (বটিয়াঘাটা ও দাকোপ উপজেলা) আসনে কৃষ্ণ নন্দীকে প্রার্থী করতে চাচ্ছে জামায়াত। দল থেকে ইতিবাচক সংকেত পেয়েছেন বলে গণমাধ্যমকে তিনি নিশ্চিত করেছেন। অবশ্য জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আলোচনা হচ্ছে, এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। জামায়াতের সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক প্রার্থিতা যেখানে দেওয়া হয়েছে সেখানে চূড়ান্ত প্রার্থিতায় তরুণ, যুবক ও ভিন্নধর্মাবলম্বীদের নিয়ে আরো বড় চমক নিয়ে আসছে দলটি। তবে দলটি থেকে নারী প্রার্থী দেওয়ার সম্ভাবনা নেই।
জানা গেছে, ব্যবসায়ী কৃষ্ণ নন্দীর গ্রামের বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে। তিনি ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতের হিন্দু সংগঠন জামায়াতে ইসলামী সনাতনী শাখার সভাপতি। সম্প্রতি খুলনায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের আয়োজিত সমাবেশসহ প্রতিটি সমাবেশে বিপুলসংখ্যক হিন্দু নারী-পুরুষের উপস্থিতি ছিল।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, হিন্দু-মুসলিম বলে কোনো বিষয় নেই। সবাই বাংলাদেশের নাগরিক, দেশের ভোটার। এ হিসাবে আমাদের দায়িত্ব সব মানুষের কাছে যাওয়া। আমরা দল হিসেবে যাচ্ছি, প্রার্থীরা যাচ্ছেন, নেতাকর্মীরাও যাচ্ছেন। আমরা শুধু সনাতন ধর্ম না, সব ধর্মের মানুষের কাছেই যাচ্ছি। আমরা নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ নই, সব এলাকায় সব মানুষের কাছে যাচ্ছি এবং সাড়া পাচ্ছি। আমাদের নীতি আদর্শের রাজনীতি। যাঁরা সচেতন মানুষ, যাঁরা শান্তি, ন্যায়, ইনসাফ, সুশাসন, মানুষের অধিকার এবং মানবিক মর্যাদা ও দেশের ভবিষ্যৎ এবং গণতন্ত্রের বিকাশ চান, তাঁরা আমাদের সঙ্গে চলবেন। আমরা আশা করি, সব ধর্মের মানুষ আমাদের আদর্শ দিয়ে তাঁদের সমর্থন দেবেন। এ ছাড়া নারীদের কাছে পৌঁছতে বিশেষ কৌশল নিয়েছে জামায়াতের মহিলা বিভাগ। সূত্র জানায়, দলের মোট কর্মীর প্রায় ৪০ শতাংশ নারী। তাঁরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাওয়ার পাশাপাশি ধর্মীয় মূল্যবোধের দাওয়াত দিচ্ছেন। মহিলা বিভাগকেও রাজনীতির সামনের সারিতে আনা হচ্ছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
স্টাফ রিপোর্টার